এবারের ঈদে মুক্তি পেতে যাচ্ছে কাজল আরেফিন অমির জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘ফিমেল’-এর চতুর্থ পর্ব। ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ ধারাবাহিক নির্মাণের মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে তারকা বনে গেছেন তিনি। নাটকের পাশাপাশি ওয়েব সিরিজও নির্মাণ করেছেন। এরই মধ্যে আবার সিনেমা নির্মাণেরও আভাস দিয়েছেন নির্মাতা অমি।
এবার ঈদে ‘ফিমেল’-এর চতুর্থ পর্ব মুক্তি পাবে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। এ জন্য টাকা খরচ করে দেখতে হবে দর্শকদের। অবশ্য দর্শকদের এ নিয়ে কখনো মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু বিপত্তি বেধেছে অন্য জায়গায়। সম্প্রতি টেলিভিশন ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত কোমল পানীয় কোকা-কোলার বিজ্ঞাপন নিয়ে সমালোচনা শুরু করেছেন নেটিজেন ও দর্শকরা।
এদিকে বিজ্ঞাপনটিতে দেখা গেছে অভিনেতা শরাফ আহমেদ জীবন ও শিমুল শর্মাকে। তারা দু’জনই অবশ্য দর্শকমহলে পরিচিতি লাভ করেছেন নির্মাতা অমির ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে। ফলে দর্শকের ধারণা, পানীয়টির বিজ্ঞাপন নির্মাতা অমিই তৈরি করেছেন। এ কারণে পানীয়টি বয়কটের ডাক দেয়ার সঙ্গে অভিনেতা জীবন ও শিমুলকেও বয়কটের ডাক দিয়েছেন দর্শকরা।
আর নির্মাতা হিসেবে অমির ‘ফিমেল-৪’সহ তার সব কাজই বয়কটের কথা বলা হচ্ছে। যদিও এ নির্মাতা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন―পানীয়টির বিজ্ঞাপন তিনি নির্মাণ করেননি। তবে এরপরও সমালোচনা ও চর্চা থেমে নেই। ফলে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে এক পোস্টে নেটিজেন ও দর্শকের উদ্দেশে খোলাচিঠি লিখেছেন পরিচালক অমি।
আজ মঙ্গলবার (১১ জুন) বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে নির্মাতা অমি লিখেছেন, ‘মানবতা ও বিবেক, এ দুটি বিষয় একজন মানুষকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। আমি সবসময় চেষ্টা করি আমার কাজের মাধ্যমে মানবতা এবং বিবেককে জাগ্রত রাখতে। গত রোজার ঈদের পর থেকে আমরা টানা ১২ দিন হিট ওয়েভের মধ্যে “ফিমেল-৪”-এর শুটিং করি। ব্যাপক পরিসরে এবং পুরো ইউনিটের সবাই মিলে কঠোর পরিশ্রম করি, শুধুমাত্র আপনাদের বিনোদন দেয়ার জন্য।’
‘আমি সবসময় চেষ্টা করি সাধারণ মানুষের হয়ে কথা বলতে। সাধারণ মানুষের জীবনের ছোট-ছোট বিষয় তুলে ধরতে, আমার কাজের মাধ্যমে। তারই ধারাবাহিকতায় আমি বানিয়েছিলাম বিদেশ, কিডনি, দই, শেষমেশ এবং আপনাদের ভালোবাসায় আজকে আমি এখানে। আমি আবেগ আপ্লূত এবং কৃতজ্ঞ আপনাদের প্রতি।’
তিনি লিখেছেন, ‘একটি বিজ্ঞাপনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকে একটি এজেন্সির, কোম্পানির এবং বিজ্ঞাপন নির্মাতার। গতকাল থেকে যে বিজ্ঞাপনের ইস্যুটি নিয়ে আমার দর্শক, আমার পরিবার ও দেশবাসী বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, আমি সবার কাছে একটি বিষয় পরিষ্কার করতে চাই যে, উক্ত বিজ্ঞাপনের সঙ্গে আমি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নই।’
‘আমি একজন পরিচালক। কোনো অভিনেতা-অভিনেত্রী যখন আমার প্রোজেক্টে কাজ করতে আসে, আমি শুধুমাত্র তাদের ডিরেকশন দেই। তাদের ব্যক্তিজীবন, তাদের কাজ, পথ চলা―এর কোনো কিছুর সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। অবশ্যই তারা আমার টিম মেম্বার। কিন্তু সেটা শুধুমাত্র যখন তারা আমার কাজ করবে তখন। এর বাইরে তাদের ব্যক্তিজীবন আছে।’
আলোচিত নির্মাতা অমি আরও লিখেছেন, ‘আপনারা আমার ওপর রাগ করছেন, আবেগ আপ্লুত হচ্ছেন। আমি আপনাদের সব রাগ-অভিমান মাথা পেতে নিচ্ছি। কারণ, বিজ্ঞাপনটির অভিনয়শিল্পী যারা আছেন, তারা আমার সঙ্গে অনেকদিন ধরেই কাজ করছেন। আপনারা অনেকেই হয়তো এই অভিনয়শিল্পীদের আমার পরিচালিত কাজের মাধ্যমে চেনেন। কিন্তু আমি শুধুমাত্রই এই অভিনয়শিল্পীদের পরিচালক, তাদের অভিভাবক নই। তারা ব্যক্তিগত জীবনে কী করবে, তা সম্পূর্ণই তাদের নিজস্ব ব্যাপার। আমার তাতে কোনো হস্তক্ষেপ নেই।’
তিনি লিখেছেন, ‘আপনারা যারা তাদের ওপর অভিমান করে বলছেন, আমাদের এত কষ্টে বানানো “ফিমেল-৪” দেখবেন না, অভিমান করে বলছেন, আমরা বয়কট করছি এটি। আপনারা নিশ্চয়ই পরিবারের একজন ভুল করলে সেই পরিবারের অন্য সদস্যদের শাস্তি দেবেন না? আমরা যারা একসঙ্গে কাজ করি, আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য বলে আমি মনে করি। আমাদের পরিবারের কেউ যদি ভুল করে থাকে, সে তার ভুল বুঝতে পারে এবং সে যদি ক্ষমাপ্রার্থী হয়, অবশ্যই আমরা চাইব তাকে যেন দেশবাসী এবং সাধারণ মানুষ ক্ষমা করে দেয়।’
নির্মাতা অমি লিখেছেন, ‘২০১০ সাল থেকে মিডিয়াতে আমার পথচলা। এই ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে আমি সবসময় চেষ্টা করেছি আমার দর্শকদের বিনোদন দেয়ার উদ্দেশ্যে কাজ করতে। আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতেও গল্প এবং শিল্পী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমি আমার দর্শকদের চাহিদা সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করব। আশা করছি আপনারা আমাকে কেউ ভুল বুঝবেন না এবং আমার পরিশ্রমকে বিফলে যেতে দেবেন না।’
এছাড়া সবশেষ সবার কাছে অনুরোধ করে তিনি লিখেছেন, ‘সবার কাছে অনুরোধ করছি, আমার কাজে কোনো অভিনয়শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবন খুঁজবেন না, আমি কারো ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কাজ করি না। আমি আমার গল্পের চরিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি, যে চরিত্রগুলো আমাদের সমাজের প্রতিচ্ছবি। আমাদের পাশে থাকবেন, ধন্যবাদ।’